ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি

ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ এখনও জানা  যায়নি

নূর আহমদ
ক্যান্সারের মূল কারণ । ধূমপান কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?


ক্যান্সারের কোনো অ্যান্সার নেই, এই কথা আগের সব সময়ের মতো এখনো সত্য। এখনো চিরন্তন সত্য। তবে ভবিষ্যত সম্পর্কে বলা যায় না। ক্যান্সারের ইতিহাস যারা ঘেঁটেছেন, তারা জানেন, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের শুরু থেকেই রোগটি ছিল। রোগটিতে এখনো সারা বিশ্বের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।

ক্যান্সার কখন থেকে শুরু?

ভয়াবহ ব্যাধি ক্যান্সারের ইতিহাস এবং এর চিকিৎসা শিরোনামে ‘ডেইলী বাংলাদেশ’ পত্রিকায় ১৬ জুলাই ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ক্যান্সারের গায়ে অনেকেই এঁটে দিয়েছেন আধুনিক আমলের রোগের তকমা। তবে ক্যান্সার রোগের ইতিহাসের বয়সটা হয়তো মানুষের অস্তিত্বের একদম সমানে সমান। প্রাচীন মিশরের মমির হাড়েও পাওয়া গেছে ক্যান্সারের অস্তিত্ব। চিলির আতাকামা মরুভূমিতে মমি হয়ে যাওয়া লাশের হাড়েও পাওয়া গেছে অস্টিওসারকোমার চিহ্ন, সহজভাবে এটিকে হাড়ের ক্যান্সারের সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। এমনকি খ্রিস্টের জন্মের ১৬০০ বছর আগের দলিল দস্তাবেজে উল্লেখিত অদ্ভুত কিছু রোগের লক্ষণাদি দেখে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন ক্যান্সার সেই আমলেও ছিলো। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডটাসের ৪৪০ খ্রিস্টপূর্বের লেখনি থেকে জানা যায়, পারস্যের এক রাণী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’


ধূমপান কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?


ধূমপান কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?



অনেকের মতে, ক্যান্সার মানবজাতির আবির্ভাবের শুরু থেকেই ছিল। American Cancer Society ’র অনলাইনে Early History of Cancer নিবন্ধের Oldest descriptions of cancer
 উপশিরোনামে বলা হয়েছে, Human beings and other animals have had cancer throughout recorded history. So it’s no surprise that from the dawn of history people have written about cancer. Some of the earliest evidence of cancer is found among fossilized bone tumors, human mummies in ancient Egypt, and ancient manuscripts. Growths suggestive of the bone cancer called osteosarcoma have been seen in mummies. Bony skull destruction as seen in cancer of the head and neck has been found, too.

Our oldest description of cancer (although the word cancer was not used) was discovered in Egypt and dates back to about 3000 BC. It’s called the Edwin Smith Papyrus and is a copy of part of an ancient Egyptian textbook on trauma surgery. It describes 8 cases of tumors or ulcers of the breast that were removed by cauterization with a tool called the fire drill. The writing says about the disease, “There is no treatment.”

is smoking harmful? How bad is smoke for your health?


ক্যান্সারের কারণ কি?

ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অনেক কথা জানি। বিশ্বাসও করি। কিন্তু ক্যান্সার থেকে বাঁচা এখনো কারো পক্ষে সম্ভব নয়, এটা কি আমরা জানি? ক্যান্সার এখনো একটি সম্পূর্ণ অপ্রতিরোধ্য রোগ, এটাই সত্য। কোনো রোগের কারণ জানা থাকলে ওই রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়, রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন কেন?

কারণ, ক্যান্সারের যেই কারণগুলো সম্পর্কে আপনি বা আমি জানি, কোনোটিই সঠিক নয়। মূলত ক্যান্সারের সঠিক কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি, এখনো পরিষ্কার নয়, আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

আপনি বলবেন, তাহলে ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে আমরা যেসব কথা শুনি, সেগুলো কোত্থেকে প্রচারিত হলো?

পৃথিবীতে অনেক ভুল তথ্য আছে, যা পৃথিবীর প্রায় সবাই বিশ্বাস করে। প্রথমে এই বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

বিশ্বের প্রায় সব সচেতন মানুষ বিশ্বাস করে, ধূমপানে ক্যান্সার, ব্রেইন স্ট্রোক সহ অনেক রোগ হয়। আমি এখানে শুধু ধূমপানে ক্যান্সার হবার বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করি।

ধূমপানে কি সত্যিই ক্যান্সার হয়?

ধূমপানে যদি সত্যিই ক্যান্সার হতো, তাহলে ধূমপায়ী কোনো লোক ক্যান্সার থেকে বেঁচে মরতে পারতো না। আপনি দেখবেন, ৩০-৪০ বছর ধরে ধূমপান করেছেন, এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই মৃত্যুবরণের সুযোগ পায়। এটা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি ধূমপানে সত্যিই ক্যান্সার হতো। আপনি বলবেন, সব ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় না। কিছু কিছু ধূমপায়ী দুর্ভাগ্যবশত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আপনার এই দাবি সত্য বলে মনে হতো আমরা কাছেও, যদি ধূমপায়ী ছাড়া অন্য কোনো মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো। কিন্তু আপনি দেখবেন, ধূমপান করেন না, এমন অসংখ্য মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মীয় ধার্মিক অনেক মানুষ এবং অধিকাংশ মহিলা ধূমপান করেন না, তবু তাদের অনেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এবং এটাই সত্য, যেসব ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তারা ধূমপানের কারণে নয়, বরং ওই কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যেই কারণে ধূমপান থেকে দূরে থাকা মানুষরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

পৃথিবীর অনেক দেশে মানুষ ব্যাপকহারে ধূমপান করে। ওই সব কোনো দেশে গিয়ে দেখবেন, যারা ধূমপান করে, তাদের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেয়ার সুযোগ পায়। ধূমপানকে একটি বৈশি^ক ‘নন্দঘোষ’ বা ‘বলির পাঠা’ বানানো হয়েছেন বলেই যে কোনো রোগের জন্য ধূমপানকে চোখ বন্ধ করে দায়ী করা হয়।

ধূমপানে ক্যান্সার হয় না, গবেষণায় প্রমাণিত

ধূমপানে যে ক্যান্সার হয় না, এই বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন দেখা যাক। ‘ধূমপান কমিয়ে লাভ নেই — ব্রিটেনে নতুন গবেষণা’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) এক গবেষণা বলছে, দিনে একটি সিগারেট খেলেও হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। স্ট্রোক বা মস্তিস্কে ক্ষরণের ঝুঁকিও বাড়ে ৩০ শতাংশ।

সিগারেট খেলে কি উপকার হয়? ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন?

বিএমজের গবেষণা বলছে,"হৃদরোগ বা স্ট্রোকের জন্য ধূমপানের নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই।"

ধূমপানের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ক্যানসার নয়, বরঞ্চ হৃদরোগ। ধূমপানের ফলে মৃত্যুর ৪৮ শতাংশই হয় হৃদরোগ থেকে।

দিনে অন্তত ২০টি সিগারেট খান, এরকম ১০০ ধূমপায়ীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের সাত জনই হয় হার্ট অ্যাটাক, না হয় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।’’

ধূমপানে কি সত্যিই ক্যান্সার হয়?

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন?


বিবিসি বাংলায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবার আগে বিবিসি নিউজে ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে 'One cigarette a day 'increases heart disease and stroke risk' শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, "Smokers need to quit cigarettes rather than cut back on them to significantly lower their risk of heart disease and stroke, a large BMJ study suggests.


is smoking haram? why is smoking haram?


Cardiovascular disease, not cancer, is the greatest mortality risk for smoking, causing about 48% of smoking-related premature deaths.

The researchers said men who smoked one cigarette a day had about a 48% higher risk of developing coronary heart disease and were 25% more likely to have a stroke than those who had never smoked."


 

Is it haram to smoke cigarettes in Islam?

 ১০০ ধূমপায়ীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়নি। আক্রান্ত হয়েছেন হার্ট অ্যাটাকে, না হয় ব্রেইন স্ট্রোকে। এই রকম গবেষণা বা পর্যবেক্ষণ আপনিও করতে পারবেন। আপনার পরিচিত বেশ কিছু সংখ্যক ধূমপায়ীর প্রতি লক্ষ্য করুন। দেখবেন, তাদের তেমন কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়নি মৃত্যুর আগে। খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে পাবেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে। তারা কি তাহলে ধূমপানেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে? মোটেই না। তারা ক্যান্সারের ‘এখনো অজানা’ কারণেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল যেই ১০০ জন ধূমপায়ীর ওপর নজর রেখেছে, ঘটনাক্রমে তাদের কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু অন্য ১০০ জন লোকের ওপর নজর রাখলে হয়তো দেখা যেতো, তাদের কেউ কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে কারণ কী? ক্যান্সার মূলত যেই কারণে হয়, সেটাই কারণ।

ধূমপানে কি ফুসফুস ক্যান্সার হয়?

এখন আপনি হয়তো বলবেন, ধূমপানে আর কিছু না হলেও ফুসফুস ক্যান্সার অবশ্যই ধূমপানেই হয়। আপনার কথা সত্য হতো, যদি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের গবেষনাকৃত ১০০ ধূমপায়ী অন্য ক্যান্সার আক্রান্ত না হয়ে সবাই ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো অথবা আপনি যদি আপনার পরিচিত ১০০ জন ধূমপায়ীর সবাইকে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখতেন। কিন্তু দেখেছেন কি? দেখেননি। এবার লক্ষ্য করুন যারা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের দিকে। দেখবেন, তাদের কেউ কেউ ধূমপান করলেও অনেকেই ধূমপান থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ধূমপান থেকে দূরে থাকা মানুষও কেন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়? আক্রান্ত হয় ওই কারণে, যেই কারণ এখনও অজানা। ধূমপায়ীরাও ধূমপানের কারণে নয়, বরং ওই অজানা কারণেই ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজু’র ওয়েবসাইটে ‘ফুসফুস ক্যান্সার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ‘গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই এই ক্যান্সার তাদের হয়, যারা ধূমপান করেন। তার মানে যারা ধূমপান করেন না, তাদের কি এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা নেই? আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায় নি। সুতরাং ধূমপান ই না, এর সাথে আরও তিনটি কারণ জড়িত থাকতে পারে— ১. বায়ু দূষণ। ২.অতিরিক্ত প্রেসার। ৩. পুষ্টির অভাব। এছাড়াও ভাইরাল ইনফেকশন, মাইকোটক্সিন, টিউবারকুলসিস, ইমিউন ডিসফাঙ্কশন, এন্ডওক্রাইন ডিজঅর্ডার এবং জেনেটিকাল কারনেও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।

 

ধূমপান কি ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে?



Does smoking cause lung cancer?


ক্যান্সার নিয়ে নতুন গবেষণা

ক্যান্সার কেন হয়: আগের ধারণা ‘বদলে দেবে’ নতুন গবেষণা’ শিরোনামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যারা ধূমপানে অভ্যস্ত নন, তারাও কেন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই নতুন এ ধারণার জন্ম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ ধূমপান। কিন্তু দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি দশ জনে একজন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন বায়ু দূষণের কারণে।

ক্যান্সার কেন হয়?


যেসব এলাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে সেই ধরনের ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাও বেশি, যাদের ক্যান্সারের কারণ ধূমপান নয়।’

 

why is cancer so deadly?


ক্যান্সার কেন হয়?

আমরা অকারণে ধূমপানের ঘাড়ে ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার দোষ চাপিয়ে দিচ্ছি। এটা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বা বিশ্বাস করা একটি জঘণ্য ভ্রান্ত বিশ্বাস।

ধূমপানের ইতিহাস

‘‘ধূমপানে ক্যান্সার হয়’’, এই কথাটি বিশ্বব্যাপী এমনভাবে প্রচারিত, মনে হয়, পৃথিবীতে ধূমপানের প্রচলনের আগে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না। ধূমপানের প্রচলন হবার পরই মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। এই নিবন্ধের শুরুতে আমরা জেনেছি, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের শুরু থেকেই মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। মানুষের আবির্ভাবের পরপরই কিন্তু পৃথিবীতে ধূমপানের প্রচলন শুরু হয়নি।

উইকিপিডিয়ায় 

History of smoking শিরোনামের নিবন্ধে ধূমপানের ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়, ÔÔWith the arrival of the Europeans in the 16th century, the consumption, cultivation, and trading of tobacco quickly spread. The modernization of farming equipment and manufacturing increased the availability of cigarettes following the reconstruction era in the United States. Mass production quickly expanded the scope of consumption, which grew until the scientific controversies of the 1960s, and condemnation in the 1980s.” 

কখন থেকে মানুষ ধূমপান করে?



আমরা জেনেছি, ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়দের আগমনের সাথে সাথে তামাকের ব্যবহার, চাষ এবং ব্যবসা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদি ধূমপানের প্রচলন কয়েক শত বছর আগে শুরু হয়, আর পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকেই মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে শুরু করে, তাহলে ধূমপানে ক্যান্সার হয়, এই কথা বলার কোনো সুযোগ থাকে?

ক্যান্সারের আরো অনেক কারণ অনেকে উল্লেখ করে থাকেন। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজু’র ওয়েবসাইটে ‘ফুসফুস ক্যান্সার’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটিতেও অনেকগুলো কারণের উল্লেখ আছে। ‘ব্লাড ক্যান্সার : কারণ ও লক্ষণ’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে ১২ জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ‘যে কোন ব্লাড ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল জেনেটিক সিস্টেমের পরিবর্তন। ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণটি এখনো অজানা, তবে নানা ধরনের রাসায়নিক বর্জ্য, তেজস্ক্রিয়তার কুপ্রভাব, ধুমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক, ভাইরাস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়।’



           স্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাব

সিগারেট খাওয়ার কি কোনো উপকারিতা আছে?


এখানেও অনেকগুলো বিষয়কে দায়ী করা হলেও প্রথমেই বলে দেয়া হয়, ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণটি এখনো অজানা।

শুধু ব্লাড ক্যান্সার নয়, কোনো ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো জানা হয়নি। এই জন্যই মানুষ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারছে না, ক্যান্সার থেকে কেউ নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারছে না।। ‘ভারতে এখন বিশ্বের ক্যান্সার রাজধানী’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে ০৯ মে ২০২৪ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘ক্যান্সারের ঘটনা ও মৃত্যু বাড়ছে। আগামী দুই দশকে আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ অতি—প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবেগুনি বিকিরণের মুখোমুখি হওয়াসহ নানা কারণে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বাস্থ্য স্ক্রিনিংয়ের কম হার। তারা এটি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।’’


সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে কি হয়?


খালি পেটে সিগারেট খেলে কি হয়?


এখানে ক্যান্সারের জন্য ৩টি বিষয়কে দায়ী করা হয়। যথা: অতি—প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। এই তিনটি সমস্যা শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই আছে বর্তমানে। তাই বলে বিশে^র সব দেশে কি ভারতের মতো এতো ব্যাপকহারে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে? তাছাড়া এই তিনটি কারণে মানুষ যদি সত্যিই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো, তাহলে আগেকার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না। কারণ এই তিনটি বিষয় আগে ছিল না। ক্যান্সার কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের শুরু থেকেই ছিল। এতে সহজেই বুঝা যায়, ক্যান্সারের জন্য এগুলো দায়ী নয়।

দেখার বিষয়, সবাই ক্যান্সারের জন্য ধূমপানকে দায়ী বলে মনে করলেও এখানে ধূমপান ছাড়া ভিন্ন তিনটি বিষয়কে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়েছে। মূলত কোনোটিই ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়। ক্যান্সারের জন্য সঠিক গবেষণা ছাড়া এই সেই কারণকে দায়ী করে বসার ফলে ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ উদঘাটন হচ্ছে না।

ভাগ্য খারাপ হওয়াই কি ক্যানসারের মূল কারণ?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ১৬ মার্চ ২০২১ তারিখে। লিখেছেন, ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘‘জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, জিন (এবহব) বা পরিবেশ নয়, ভাগ্য খারাপ হওয়াই অনেক ক্যানসারের মূল কারণ। বহু মানুষ আজীবন ধূমপান করেও লাং ক্যানসারে আক্রান্ত হন না। অনেকেই আবার ধূমপান না করে বা সুস্থ—সুন্দর জীবনযাপন করেও ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কোন সিগারেট এ নিকোটিন কম?


এটাকে দৈবচক্র বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কে, কখন, কীভাবে ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারে না।’’

সেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘‘স্মরণাতীতকাল থেকে ক্যানসার আমাদের জীবনসঙ্গী। রোগ নির্ণয়ের সুষ্ঠু ও বৈজ্ঞানিক উপায় বেশি জানা ছিল না বলে আগে ক্যানসার আমাদের কাছে এত পরিচিত ছিল না। ক্যানসারের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রকৃত ও পর্যাপ্ত তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জানা নেই। সেজন্য ক্যানসার সেলকে টার্গেট করা এবং সঠিক প্রতিরোধ বা প্রতিকার উদ্ভাবন সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।’’

সিগারেট খাওয়া কি হারাম?


দেখেছেন? এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘‘ক্যানসারের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রকৃত ও পর্যাপ্ত তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জানা নেই।’’

তবে আমার বিবেচনায়, ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার দুইটি উপায় আছে। (১) ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মধ্যে কোন্ বিষয়ের মিল রয়েছে, কমন কোন্ বিষয় রয়েছে। যদি এমন কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যায় এবং দেখা যায় (২) যেসব মানুষের মধ্যে ওই বিষয়টা নেই, তারা ক্যান্সারে তেমন আক্রান্ত হয় না। এভাবে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করলে এক সময় ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে এবং মানুষ ক্যান্সার থেকে বাঁচার সুযোগ পাবে।

ক্যান্সারের জন্য কোনো বিষয়কে ঢালাওভাবে দায়ী না করে ক্যান্সারের সঠিক কারণ নিয়ে আরো গবেষণা করা জরুরী।

নূর আহমদ

ফিটনেস বিষয়ক লেখক

ফেসবুক

ইউটিউব







Next Post