নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে দূরে থাকবে ৩টি মারাত্মক রোগ!
নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করুন, তিনটি রোগ থেকে নিশ্চিতভাবে নিরাপদ থাকবেন
নূর
আহমদ
একটা সময় ছিল মানুষকে অনেক শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে প্রতিটা দিন কাটাতে হতো। মানুষ তখন শারীরিক পরিশ্রমকে জীবনের অংশ বলেই মনে করতো, মেনে নিতো। শারীরিক পরিশ্রম করা ছিল জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত নানান ভাবে মানুষকে কায়িক শ্রম করতে হতো। কায়িক শ্রম থেকে দূরে থেকে জীবন কাটানোর সুযোগ মানুষের তেমন ছিল না। গৃহস্থালীর প্রায় সব কাজে ছিল শারীরিক পরিশ্রম। চলার পথে করতে হতো শারীরিক পরিশ্রম। অনেক দূরের পথও মানুষ অনায়াসে পাড়ি দিতো হেঁটে হেঁটেই। যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না।
সময়ের পরিবর্তনে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি মানুষের জীবন থেকে শারীরিক পরিশ্রমের উপলক্ষ্যগুলোকে সরিয়ে নিতে শুরু করলো। মানুষ আরামের প্রযুক্তিগুলোকে আশীর্বাদ ভেবে নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে শুরু করলো। চলার পথে চলে এসেছে হরেক রকম যানবাহন। এখন মানুষ
১০-১৫ কিলোমিটার দূরের পথ তো নয়ই, ৩-৪ কিলোমিটার দূরের পথও নয়, আধা কিলোমিটার পথও হেঁটে
হেঁটে যেতে চায় না। গৃহস্থালীর প্রায় সব কাজে চলে এসেছে আরাম। কায়িক শ্রমের প্রযুক্তিগুলোকে
দূরে সরিয়ে দিয়েছে আরাম-বান্ধব সব প্রযুক্তি।
যখন থেকে মানুষ শারীরিক পরিশ্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে শুরু করেছে, তখন থেকে মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু রোগ ব্যাপক হারে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ।
আগে মানুষ যখন নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতো, তখন এই রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করার সুযোগ পেতো না। মানুষ যখন শেষ বয়সে এসে শারীরিক পরিশ্রম থেকে অবসরে চলে যেতো, তখন মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হতো। কিন্তু এখন মানুষের জীবনে শারীরিক পরিশ্রম তেমন একটা না থাকায় মানুষ অল্প বয়সেই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ এখন ৩০—৪০ বছর বয়সে এসেই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ১০—১৫ বছর বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঘটনাও এখন বিশ্বব্যাপী সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বিয়ের আগেই উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে ছোট ছোট বাচ্চা রেখে হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মারা যায়। এসব ঘটনার উদাহরণ আমাদের সবার আশেপাশেই আমাদের পরিচিতজনদের মধ্যেই অনেক আছে।
আপনি আপনার চারপাশে লক্ষ্য করে দেখুন, এখনো যেসব লোক ৬০—৭০ বছর বয়সে এসেও কৃষিক্ষেতে কৃষিকাজে লিপ্ত, দেখবেন তাদের কেউই এই তিনটি রোগের কোনেটিতেই আক্রান্ত নয়। যারা আমাকে চেনেন, তাদেরকে আমাদের এলাকার এরকম অনেক লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাবে।
আপনার পরিচিত যেসব লোক এসব রোগে আক্রান্ত, খুঁজে দেখুন তাদের কেউই শারীরিক পরিশ্রমের কোনো পেশায় নিয়োজিত নয়, সবাই আরামে থাকতে অভ্যস্ত।
যারা মনে করেন, আগে খাদ্যে ভেজাল ছিল না বলে মানুষ এসেব রোগে আক্রান্ত হতো না, কিন্তু এখন খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তারা বলুন, (১) এখনো যারা শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত, যেমন নিয়মিত কৃষিখেতে কাজ করেন বা পায়েচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা কি ভেজাল খাদ্য খান না? শুধু কি আরামের পেশায় নিয়োজিত মানুষ ভেজাল খাদ্য খায়? (২) যেসব দেশে খাদ্যে ভেজাল তেমন নেই, উন্নত দেশ, সেসব দেশের মানুষ কি এসব রোগে আক্রান্ত হয় না? (৩) আগে মানুষ শেষ বয়সে এসে যখন শারীরিক পরিশ্রম থেকে অবসরে যেতো, তখন কেন মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হতো? তখন কি তাদেরকে শুধু ভেজালযুক্ত খাদ্য খাওয়ানো হতো?!
এখনো যেহেতু অনেক মানুষ এসব রোগ থেকে ৬০—৭০ বছর বয়সে এসেও নিরাপদ থাকতে পারে শুধুই শারীরিক পরিশ্রমের কাজের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে, আপনিও এখনো এসব রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন নিজেকে, তাদের মতো কোনো না কোনো শারীরিক পরিশ্রম করে। আপনাকে তাদের মতো কৃষিখেতে কাজ করতে হবে না, পায়েচালিত রিকশাও চালাতে হবে না।
আপনি শুধু প্রতিদিন সকালে মর্নিং ওয়াক বা প্রাতঃভ্রমণ করুন ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা, তবে জোরে জোরে, যেন শরীর গরম হয় বা ঘাম ঝরে, তাহলে আপনিও তাদের মতো নিরাপদ থাকবেন এই তিনটি ভয়ঙ্কর রোগ থেকে, নিশ্চিত থাকতে পারেন।
কখনোই মর্নিং ওয়াক থেকে ৩-৪ মাস বা তার চেয়ে বেশি লম্বা বিরতি নেবেন না। প্রতিদিন কমপক্ষে একবার মর্নিং ওয়াক করে শরীর থেকে ভালোভাবে ঘাম ঝরান। আপনার এনার্জি বার্ন হবে। আপনি এই রোগগুলো থেকে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি মনের চাহিদামতো যে কোনো খাবার খেতে পারবেন। আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারবে না।
নূর আহমদ
শিক্ষক, কলামিস্ট; ফিটনেস বিষয়ে অধ্যয়নরত।