টেনশনে কি সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়?

টেনশনে কি সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়?

নূর আহমদ

হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ একটা খুবই বিপজ্জনক এবং আতঙ্কিত রোগের নাম। বর্তমান বিশ্বে মানুষ যেসব রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে, সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে হার্ট অ্যাটাক। হার্ট অ্যাটাকে মানুষ শুধু শেষ বয়সেই মারা যায় না, অল্প বয়সেও অসংখ্য মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি ভয়াবহ দিক হচ্ছে, রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ হঠাৎ করেই মৃত্যুবরণ করে, চিকিৎসার সুযোগ পায় না।

দেশে পাঁচটি মৃত্যুর একটি হৃদ্রোগে’ শিরোনামে প্রথম আলোয় ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদ্রোগ। মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ ঘটছে হৃদ্রোগের কারণে।’’

বিশ্বে হৃদরোগে প্রতি দেড় সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ জন মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া বিশ্বে হৃদরোগে প্রতি দেড় সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয়।’’

হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ বা অকস্মাৎ হৃদরোগে মৃত্যু হলো একটি নীরব ঘাতক; যা বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের জীবন মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নেয়। বুকে ব্যথা বা এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই রোগী মৃত্যুবরণ করে। তাই রোগী বা তার পরিবার যেমন বিপদ বুঝে ওঠার আগেই যা ঘটার ঘটে যায়, আবার চিকিৎসকও রোগীকে তেমন কোনো সাহায্য করার পর্যাপ্ত সময় পান না।’’

টেনশনে কি সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়?


আমরা প্রায় সবাই আমাদের পরিজন, আপনজন এবং পরিচিতজনদের অনেককে হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি। তাই হার্ট অ্যাটাকের ভয় আমাদের সবার মনেই কাজ করে।

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, এই বিষয়ে সমাজে মারাত্মক কিছু ভুল ধারণা ছড়িয়ে আছে। তন্মধ্যে একটি হলো, টেনশনে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। টেনশনে হার্ট অ্যাটাক হয়, এই কথা শুনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই কথা বিশ^াস করে না, এমন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তবে আমি এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমি বিশ্বাস করি, টেনশনে মানুষ কখনোই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। আমার এই বিশ্বাসের কথা শুনে আপনি ভাবছেন, আপনি নিজেই অনেক মানুষকে টেনশনে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে বা মারা যেতে দেখেছেন, তবু কথাটি ভুল হয় কী করে!

টেনশনে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, এটা আমি কেন বিশ্বাস করি না? আপনি হয়তো দেখেছেন, আপনার পরিচিত কেউ টেনশনে ভোগার পর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছে বা মারা গেছে। কিন্তু টেনশনে নয়, আনন্দে উল্লাস করতে গিয়েও মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকে, মারা গিয়েও থাকে।

চুরি করতে গিয়ে বিপুল অর্থ দেখে হার্ট অ্যাটাক চোরের, অতঃপর’ শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময়ে ০৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘‘অদ্ভুত এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশে। চোর এসেছিল চুরি করতে। কিন্তু এতটাও সে আশা করেনি। চুরি করার পর তার থলিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেখে রীতিমতো অবাক। আনন্দ আর বিস্ময়ে কী করবে ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয় তার।’’

৪০ লাখ ডলার জেতার আনন্দে হার্ট অ্যাটাক করলেন তিনি’ শিরোনামে জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোরে ২৭ জুন ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘‘সিঙ্গাপুরের মারিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে ৪০ লাখ ডলার জেতার পর এক ব্যক্তির অচেতন হয়ে পড়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বলা হচ্ছে, একবারে এত বেশি অর্থ জেতার আনন্দে উত্তেজিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি।’’

আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাস করতে গিয়ে প্রকৌশলীর মৃত্যু’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘‘বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয়ে অন্য সমর্থকদের সঙ্গে রোববার রাতে আনন্দ করতে বের হয়েছিলেন তরুণ প্রকৌশলী জয়ব্রত ভট্টাচার্য (২৫)। কিন্তু মধ্যরাতে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় আনন্দ উল্লাসের পর বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। গভীর রাতে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়।’’

আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাসে মোহনগঞ্জে যুবকের মৃত্যু’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৮ নভেম্বর ২০২২ তারিখে। সেখানে বলা হয়, ‘‘নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাস করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে শামীম মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত ২টার দিকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় মেক্সিকোর বিরুদ্ধে অর্জেন্টিনা গোল করলে উল্লাস করার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।’’

এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করে আমি যদি বলি, টেনশনে নয়, বরং অতি আনন্দে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, তাহলে আমার কথা কি সঠিক হবে? হবে না।

কারণ আনন্দ বা টেনশনে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না, আনন্দ বা টেনশন হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের পরোক্ষ কারণ। হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে, শরীরে কোলেস্টেরল বা চর্বি জমা হয়ে হার্টে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়া।

আমরা অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের এই মূল কারণের দিকে লক্ষ্য করি না। ‘হার্টের ব্লক দূর করতে যা খাবেন’ শিরোনামে দৈনিক দেশ রূপান্তরে ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ‘‘হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি যদি কোনো কারণে সংকুচিত হয়ে যায় কিংবা রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমে যদি রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে তবে হার্ট ব্লক হয়েছে বলা হয়। অর্থাৎ রক্তনালিতে ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে না পারার কারণেই হার্ট ব্লক হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে করোনারি আর্টারি ডিজিস নামে বলা হয়।’’

হার্টের রক্তনালিতে ব্লক কিনা বুঝবেন যেভাবে’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২১ আগস্ট ২০২২ তারিখে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ‘‘হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে গেলে অথবা রক্তনালিতে কোলস্টেরল জমে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হলে তাকে হার্ট ব্লক বলা হয়। করোনারি আর্টারিতে সংকোচন বা কোলস্টেরল জমে এ সমস্যার সৃষ্টি বলে মেডিকেলের ভাষায় এটি করোনারি আর্টারি ডিজিস বলা হয়।’’

হার্টের ধমনীতে ব্লক কেন হয়, কী করবেন?’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ‘‘হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর নাম ‘করোনারি ধমনী’। এ করোনারি ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি হলে তাকে বলে ‘ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজ’। ধমনীতে ব্লকের মূল কারণ কোলেস্টেরল, যা আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ধমনীর ভেতরের গায়ে জমা হয়ে ব্লকের সৃষ্টি করে।’’

এই ৪টি রেফারেন্স থেকে সহজেই বুঝা যায়, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের মূল বা প্রত্যক্ষ কারণ: শরীরে কোলেস্টেরল জমা হয়ে যাওয়া। যেসব মানুষের শরীরে কোলেস্টরল জমা হবার সুযোগ পায়, তারা টেনশনে বা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাদের হার্ট ব্লক হয়ে যায়। অনেকেই তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণও করে। তবে শরীরে কোলেস্টেরল জমা হয়ে গেলে টেনশনে বা আনন্দে উত্তেজিত হবার প্রয়োজন হয় না, মানুষ এমনিতেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দেখবেন, অসংখ্য সুখী মানুষ, যাদের জীবনে তেমন টেনশন নেই, তারা হুট করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, অনেকে সাথে সাথে মারাও যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের উপর কোনো সমীক্ষা চালালে দেখা যাবে, সুখী মানুষরাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত এবং সমাজের খেটে খাওয়া মানুষরা হৃদরোগে তেমন একটা আক্রান্ত নয়।

কায়িক শ্রমে লিপ্ত থাকার ফল

দেখা যায়, যেসব মানুষ অনেক বছর ধরে কায়িক শ্রমের কোনো পেশায় নিয়োজিত, নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করে, তারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, তারা উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত নয়। কারণ নিয়মিত কায়িক শ্রম করার কারণে তাদের শরীরে কোলেস্টেরল জমা হতে পারে না। এই শ্রেণির মানুষের অনেকের জীবনেই প্রচুর টেনশন থাকে। তবু তাদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত না হওয়াটা পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে, হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ টেনশন নয়, বরং কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকা, আরামে আরামে থাকা, শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া।

শরীরে কোলেস্টেরল জমা হতে না পারলে হার্ট অ্যাটাক হতেই পারে না

শরীরে কোলেস্টেরল জমা হতে না পারলে মানুষ অনেক টেনশন করলেও, টেনশনে সারাদিন মাটিতে গড়াগড়ি খেলেও হার্ট ব্লক হয় না। আর শরীরে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে মানুষ টেনশন না করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অসংখ্য সুখী মানুষের প্রতিনিয়ত হার্ট অ্যাটাক হওয়াটা যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আর টেনশন করলে বা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে গেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে মানুষের হার্ট ব্লক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে টেনশন বা আনন্দে উত্তেজিত হওয়াটা হার্ট অ্যাটাকের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী হতে পারে শুধু। কিন্তু প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে, শরীরে কোলেস্টেরল বেশি থাকা।

মানসিক চাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক নেই

‘মানসিক চাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক নেই’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘একটা সময় মনে করা হতো মানসিক চাপ, অবসাদ কিংবা অসুখী হলে মানুষের মৃত্যু হয়। কারণ মানসিক চাপে থাকলে সেটি হৃদপিণ্ডের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানস্যাটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, অতীতের এই ধারনা ভুল ছিল এবং সেটি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।

যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা গত বারো বছর ধরে যৌথভাবে এই জরিপ চালিয়েছেন। এই জরিপে উভয় দেশের ১০ লাখ নারীর মতামত নেয়া হয়েছে। এরপর সেটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষক মি: পিটো বলেন, “কিন্তু অনেকই মনে করে মানসিক চাপে থাকলে কিংবা অসুখী হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। এটা সত্য নয়। আসলে অনেক মানুষ এটা ভাবতে পছন্দ করে।”

আমি এই পর্যন্ত অনেকবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতাম, যদি

এবার আমি নিজের কথা বলি। ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই কয় বছরে আমার জীবনে গুরুতর মানসিক চাপের অনেক বিষয় এসেছিল। যদি মানসিক চাপ বা টেনশনে মানুষ সত্যিই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতো এবং একজন মানুষ এক জীবনে একবার দু’বার নয়, বরং ২০—৩০ বার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতো, তাহলে আমি ওই কয় বছরে ২০—৩০ বারের বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতাম নিঃসন্দেহে। কিন্তু একবারও হইনি। কারণ শরীরে কোলেস্টেরল জমা হতে না পারলে মানুষ কোনোভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। আমার জীবনে এই পর্যন্ত কোনো এক মাসও কায়িক শ্রম ছাড়া কাটেনি। শরীরে কোলেস্টেরল জমা হবার সুযোগ হয়নি। তাই হার্ট অ্যাটাক কোনো বাহানায় আমাকে আক্রমণ করতে পারেনি। এখনো আমি নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করি। তাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কোনো ভয় আমার মনে নেই।

মানসিক উত্তেজনা থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা কেন ঘটে?

আরেকটি কথা। দেখা যায় কিছু মানুষ কোনো বিষয়ে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লে বা মারাত্মক মানসিক অস্থিরতায় ভুগলে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, মারাও যায় অনেক সময়। এইসব ঘটনায় আমরা যদি খুঁজে দেখি, দেখবো, (১) এই সব মানুষের প্রায় সবাই আগ থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব রোগে ভুগছিলো। এই রোগগুলোও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কারণ। এই রোগগুলো মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যায়। যেহেতু এই রোগগুলোও শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণে হয়ে থাকে, তাই ধরে নিতে হবে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত মানুষের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়াও শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণেই। (২) তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে, তারা আগেও দুই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছিল। আগে থেকেই রোগী হবার কারণে মানসিক উত্তেজনায় তারা সহজেই আবারও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছে। মানসিক উত্তেজনা এখানে উপলক্ষ মাত্র। এটা শুধুই পরোক্ষ কারণ হতে পারে। মূল কারণ শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া।

আপনি যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘাম ঝরানো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করেন, আপনার জীবনে অনেক টেনশন থাকলেও আপনি হার্ট অ্যাটাক থেকে নিরাপদ থাকবেন আর আপনি যদি আরামে আরামে থাকেন, কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকেন, আপনার জীবনে টেনশন তেমন না থাকলেও আপনি যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করুন। কোলেস্টেরল প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা। বিকল্প উপায় হচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত বা পরিমিত খাবার খাওয়া।

নূর আহমদ

ফেসবুক পেইজ

ইউটিউব চ্যানেল

Next Post Previous Post