ওজন বাড়ে কেন? ওজন কমানোর কার্যকর উপায়

ওজন বাড়ে কেন? ওজন কমানোর কার্যকর উপায়

নূর আহমদ

বিগত কয়েক দশক ধরে মানুষের ওজন বৃদ্ধির হার গাণিতিক হারে বাড়ছে। মানুষ এখন না চাইলেও তার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ওজন বেড়ে যাবার কারণ সম্পর্কে আগে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। ওজন বেড়ে যাবার কারণ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। যে যাই বলেন, ওজন বেড়ে যাবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো বেশি খাওয়ার পাশাপাশি আরামে জীবন যাপন করা। বেশি খাওয়া এবং কায়িক  শ্রম থেকে দূরে থাকা এক হওয়া।

ওজন বাড়ে কেন? ওজন কমানোর কার্যকর উপায়


আগের দিনে, আজ থেকে ৫০—৬০ বছর আগেও মানুষ মনের ইচ্ছামতো খেতে যেমন পারতো না, আরামে আরামে একটা দিন কাটাতেও পারতো না। তাই মানুষ চিকন থাকতো বেশি। মোটা হতে পারতো না। অনেকে মোটা হবার অনেক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও মোটা হতে পারতো না শুধু আরামে জীবন যাপন করতে না পারার কারণে। মানুষের জীবনের পদে পদে তখন ছিল কায়িক শ্রম। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানুষকে নানানভাবে  কায়িক শ্রম করতে  হতো। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে মানুষের জীবন থেকে শারীরিক পরিশ্রম দূরে সরে যেতে লাগলো। আরামদায়ক প্রযুক্তির আশির্বাদে মানুষ যেসব কাজ আগে শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে করতো, সেসব কাজ এখন হয়ে যাচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই, মেশিনের মাধ্যমে। অনেক মানুষ এখন চাইলেই আরামে থাকতে পারছে ২৪ ঘন্টা। তাছাড়া মানুষ এখন মনের চাহিদামতো খেতেও পারছে। এই দুটি বিষয় যাদের জীবনে একত্রিত হয়, তারা স্থূল হয়ে যেতে সময় লাগে না। আর স্থূল হয়ে গেলে অনেক মানুষ বুঝতে পারে স্থুল হওয়া কতোই না অস্বস্তিকর এবং ক্ষতিকর।

স্থুল মানুষ যখন স্থুলতার ক্ষতি সম্পর্কে বুঝতে এবং স্থূলতাজনিত নানান সমস্যা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করে, তখন ওজন কমানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। কিন্তু অনেকে চাইলেও, অনেক চেষ্টা করলেও ওজন কমাতে পারে না।

ওজন কমানোর জন্য করণীয় কী?

আমরা ইতোমধ্যে ওজন বেড়ে যাবার কারণ সম্পর্কে জেনেছি। ওজন বেড়ে যায় যেই পথে, ওজন কমানো যায় ওই একই পথ ধরেই। যেহেতু বেশি খাওয়া এবং আরামে আরামে থাকার কারণে ওজন বাড়ে, তাই ওজন কমাতে হলে কম কম খেতে হবে এবং নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। ওজন কমানোর জন্য কম কম খাওয়া বা ডায়েট কন্ট্রোল এবং শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। আপনি যতো ডায়েট কন্ট্রোল করবেন এবং কায়িক শ্রম করবেন, আপনার ওজন কমার সম্ভাবনা ততো বাড়বে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আপনি যখন বাইরে বের হবেন, তখন বের হবার আগে খালিপেটে বের না হয়ে পেটভরে খেয়ে বের হোন। এছাড়া কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই কিছু না কিছু খেয়ে নিতে হবে। খালিপেটে ব্যায়াম করাটা বিপজ্জনক। যখন ঘরে থাকবেন, তখন কম খাবেন। দিনে তিনবার পেটভরে না খেয়ে একবার পেটভরে খান, বাকি দু’বার পেট খালি রেখে খাওয়া শেষ করুন। ক্ষুধা বেশি লাগলে পানি পান করে নিন।

ওজন কমানোর জন্য খাবারে বাছবিচার

ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাবার (শর্করাজাতীয়, বেশি ক্যালরী সমৃদ্ধ, প্রোটিন এসব খাবার) বর্জন করার প্রয়োজন নেই। দেখবেন যারা নিয়মিত কায়িক শ্রমে নিযুক্ত মানুষরা যে রকম খাবারই খান না  কেন, তা হজম হয়ে যায় পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করার ফলে। এনার্জি আর্নের পাশাপাশি এনার্জি বার্ন করলে কোনো খাবার আপনার শরীরে চর্বি জমাতে বা বাড়াতে পারবে না। আপনি ইচ্ছেমতো যে কোনো খাবার খেতে পারবেন।

আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস থেকে বেঁচে থাকার কার্যকর উপায়

এই খাবারে ওজন বাড়ে, ওই খাবারে ওজন কমে, এইসব কথায় কান না দিয়ে আপনি সব কিছু কম কম খান। পেট খালি রেখে খাওয়া শেষ করুন। ক্ষুধা লাগলে তৎক্ষণাৎ খাবেন না। ক্ষুধা জিইয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ ক্ষুধা জিইয়ে রাখলে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য শরীর তখন আপনার শরীরে জমে থাকা চর্বি থেকে খাবার সংগ্রহ করতে শুরু করবে, এতে শরীরে চর্বি কমতে থাকবে।

ওজন কমানোর চেষ্টা সত্ত্বেও ওজন না কমলে . . .

একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য আপনি নিয়মিত ৪০ মিনিটের মতো সময় ঘামঝরানো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করার পাশাপাশি কম কম খেলেও যদি আপনার ওজন না কমে, আপনি মোটেই হতাশ হবেন না। কারণ ওজন কমোনোর এসব চেষ্টা থাকার পরও ওজন না কমলেও আপনার শরীর হালকা হবে, চলাফেরা সহজ হবে, আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আপনি ওইসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকবেন, যেসব রোগের জন্য ওজন বেশি হওয়া বা শরীরে চর্বি বেশি থাকাটা দায়ী। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক। ওজন কমানোর জন্য সব সময় চেষ্টা করে যান। ওজন না কমলেও এই তিনটি রোগ থেকে আপনি পুরোপুরি নিরাপদ থাকবেন। বেশি ওজনে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।

নূর আহমদ

ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক

ফেসবুক পেজ

ইউটিউব চ্যানেল


Next Post Previous Post