উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? উচ্চ রক্তচাপ থেকে বেঁচে থাকার প্রধান উপায়
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? উচ্চ রক্তচাপ থেকে বেঁচে থাকার প্রধান উপায়
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার রোগটিতে মানুষ এখন ডায়াবেটিসের মতো ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা অনেকেই জানি না, কেন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। এই না জানার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপের কারণ নিয়ে সঠিক তথ্যের পরিবর্তে ভুল তথ্য প্রচার করা হয় বেশি। উচ্চ রক্তচাপের কারণ নিয়ে সবেচেয়ে বেশি প্রচার করা হয়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নাকি অজানা। এ কথাটি শুনে মানুষ উচ্চ রক্তচাপকে একটি অপ্রতিরোধ্য রোগ বলে মনে করে এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়াকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে বসে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণ নিয়ে আরো যেসব তথ্য প্রচার করা হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, টেনশনে নাকি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে ধূমপানকেও দায়ী করতে দেখা যায়। বয়স বেশি হওয়াকেও উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে প্রচার করা হয়। উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত রোগ বলেও প্রচার করা হয়। লবণ খেলেও নাকি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। আপনি উচ্চ রক্তচাপের কারণ নিয়ে অধ্যয়ন করলে দেখবেন, অধিকাংশ নিবন্ধে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে এই বিষয়গুলোকে প্রচার করা হয়। আমি শুধু একটি নিবন্ধের কিছু অংশ উল্লেখ করছি।
‘‘উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়, কী করবেন?’’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৮ মে ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।’’ নিবন্ধটিতে উচ্চ রক্তচাপের কিছু সম্ভাব্য কারণও উল্লেখ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে বংশানুক্রমিক, লবণ খাওয়া, ধূমপান, মানসিক চাপ, বংস বেশি হওয়া এই বিষয়গুলোকেও উচ্চ রক্তচাপের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ নিয়ে এই তথ্যগুলো কি বাস্তব? বাস্তবেই কি উচ্চ রক্তচাপের কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অজানা? বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য আমাদেরকে দেখতে হবে, সমাজের কোন শ্রেণির মানুষ উচ্চ রক্তচাপে বেশি আক্রান্ত হয়? আর কোন শ্রেণির মানুষ বয়স অনেক বেশি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয় না?
বিষয়টা আমি নিজে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। আমি দেখেছি, সমাজের একটা বিশেষ শ্রেণির মানুষ উচ্চ রক্তচাপে বেশি বেশি আক্রান্ত হয়। আর আরেক শ্রেণির মানুষ উচ্চ রক্তচাপে তেমন আক্রান্ত হয় না। যেসব মানুষ আরামে আরামে জীবন যাপন করে, মনের চাহিদামতো খায় বা বেশি খায়, তারাই ব্যাপকহারে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে যেসব মানুষ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করে, তারা উচ্চ রক্তচাপে তেমন আক্রান্ত হয় না।
আপনি একটু লক্ষ্য করে দেখুন, আপনার পরিচিত যেসব মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তাদের তেমন কেউই কায়িক শ্রমের কোনো পেশায় নিয়োজিত নয়। তাদের প্রায় সবাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার আগে আরামে আরামে জীবন যাপন করতো, মনের চাহিদামতো খেতো, যার ফলে তাদের শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়েই তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে আপনার পরিচিত যেসব মানুষ অনেক বছর ধরে নিয়মিত কায়িক শ্রম করছেন, দেখবেন তাদের বয়স অনেক বেশি হয়ে যাবার পরও তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়নি। এর কারণ নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করার কারণে তাদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারেনি বলেই তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়নি।
আমার পরিচিত অনেক মানুষ আছেন, যারা মানুষের কায়িক শ্রমের কাজগুলো করে থাকেন পেশা হিসেবে, তাদের অনেকের বয়স ৫০ বছরের বেশি হওয়া সত্ত্বেও তারা উচ্চ রক্তচাপে এখনো আক্রান্ত হননি। অন্যদিকে আমার পরিচিত যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার আগে তাদের প্রায় সবাই আরামে জীবন যাপন করেতেন। আরামে জীবন যাপন করার ফলেই তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন। আমি নিজেও এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হইনি শুধুই নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করার কারণে। আমার চেয়ে কম বয়সী অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন শুধু আরামে আরামে জীবন কাটানোর কারণে।
যারা নিয়মিত ঘাম ঝরানো কায়িক শ্রম করেন, তাদের বাবা মা সবাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও, তারা অনেক মানসিক চাপে থাকলেও, তারা খাবারের সাথে লবণ খেলেও, তারা ধূমপান করলেও, এমনকি তাদের বয়স অনেক বেশি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয় না শুধুই শরীরে কোলেস্টেরল জমা হতে না পারার কারণে।
আর যারা আরামে থাকে, মনের চাহিদামতো খায়, তারা সহজেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে পড়ে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণে।
যারা ১০—১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কায়িক শ্রম নির্ভর বিভিন্ন খেলা যেমন: ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, টেনিস ইত্যাদি খেলে খেলে যাচ্ছেন, দেখবেন, তারা উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিরাপদ। নিয়মিত এনার্জি বার্ন করার কারণে তাদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না বলেই তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন না। যারা অনেক বছর ধরে নিয়মিত পায়েচালিত রিকশা চালাচ্ছেন, দেখবেন, তাদের অনেকে ধূমপানও করে, অনেকে খাবারের সাথে লবণ খায়, তাদের অনেকের জীবনে প্রচুর মানসিক চাপ রয়েছে, এমনকি তাদের অনেকের বাবা মা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন না, শুধু নিয়মিত কায়িক শ্রম করে যাবার কারণে। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা নয়, বরং শতভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ সম্পূর্ণ পরিষ্কার।
আপনি যদি এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন, উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিরাপদ থাকতে চইলে নিয়মিত অন্তত ৪০ মিনিট ঘামঝরানো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করুন। উচ্চ রক্তচাপ থেকে সম্পূর্ণ রূপে বেঁচে থাকবেন। শুধু তাই নয়, উচ্চ রক্তচাপ থেকে বেঁচে থাকলে আপনি আরো কিছু মারাত্মক রোগ থেকে বেঁচে থাকবেন। সেগুলো হলো ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনী বিকলতা ইত্যাদি।
তাই আসুন, উচ্চ রক্তচাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত কায়িক শ্রম করি।
নূর আহমদ
ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক
https://www.youtube.com/@FitnessNurAhmed