প্রেশার লো হওয়ার কারণ কি? লো প্রেশারে কি হার্ট এটাক হয়?
প্রেশার লো হওয়ার কারণ কি? লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়? লো প্রেশারে কি হার্ট অ্যাটাক হয়?
উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার) নিয়ে বিশ্বব্যাপী যেমন অসংখ্য ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, কম রক্তচাপ (লো প্রেশার) নিয়েও অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যাদের প্রেশার লো, তাদের অধিকাংশই একে ‘রোগ’ মনে করেন। আতঙ্কে বা ভয়ে থাকেন প্রায় সময়। কেন ভয়ে থাকেন? ভয়ে থাকেন এজন্য, কারণ লো প্রেশার থেকে হার্ট অ্যাটাক হয় বলে মনে করা হয়।
আমরা আজকে বিস্তারিতভাবে জানবো, (১) লো প্রেশার, নাকি হাই ব্লাড প্রেশার, কোনটা ক্ষতিকর? (২) লো প্রেশার হলে কি মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়? (৩) লো প্রেশারের কারণ কী?
আগে আমরা লো প্রেশার নিয়ে একটি নিবন্ধ পড়ি।
‘লো প্রেশার হলে কী করবেন?’ শিরোনামে প্রথম আলোয় ১১ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম লিখেন, ‘‘আমাদের শরীরের জন্য উচ্চ রক্তচাপের মতো নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো ব্লাড প্রেশারও ক্ষতিকর।’’ নিবন্ধটিতে আরো বলা হয়, ‘‘লো নাকি হাই প্রেশার কোনটি বেশি খারাপ? দুটোই খারাপ, তবে যখন প্রশ্ন করা হয় কোনটি বেশি খারাপ? নিঃসন্দেহে লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বেশি খারাপ। কারণ, হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে বা কোনো কারণে প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষণিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে। এ জন্যই ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা রোধে শিরায় স্যালাইন দেওয়া হয়। তবে উচ্চ রক্তচাপও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।’’
এই নিবন্ধে একজন ডাক্তার নিজেই কম রক্তচাপকে শুধু ক্ষতিকর বলেননি, বরং উচ্চ রক্তচাপের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন। আরও বলেছেন, ‘‘হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে বা কোনো কারণে প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষণিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে।’’
জানি না, বাস্তবতার সাথে এসব কথার মিল তিনি গভীরভাবে যাচাই করে দেখেছেন কিনা! আমার বাবার ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রেশার লো ছিল নিয়মিত। তিনি প্রচুর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতেন নিয়মিতভাবে। তাঁর শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরতো কাজ করতে গিয়ে। তাঁর শরীরে চর্বি জমা হওয়ার সুযোগই হতো না। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে সব রকম কাজ থেকে অবসরে চলে যাবার পর থেকে তিনি এখন উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত। আমার মায়েরও একই অবস্থা। তিনিও এখন সাংসারিক কাজ থেকে অবসরে আছেন এবং আমার বাবার মতো একইভাবে একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। উভয়কে এখন নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ গ্রহণ করতে হচ্ছে। শুধু তা—ই নয়, মাংসসহ অনেক পছন্দের খাবার এড়িয়ে চলতে হচ্ছে। অথচ যখন তাঁদের প্রেশার লো ছিল, তখন এভাবে কোনো খাবার থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে হয়নি কখনো; কোনো খাবার খাওয়া নিয়ে বাছ—বিচার করতে হয়নি এবং নিয়মিত লো প্রেশার থাকার কারণে লো প্রেশার দূর করার জন্য একটিবারের জন্যও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়নি এবং কখনো কোনো ঔষধও গ্রহণ করতে হয়নি। তাহলে এই ডাক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে নিম্ন রক্তচাপ কিভাবে বেশি খারাপ এবং ক্ষতিকর?
আপনি বা আপনার পরিচিত যারা এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়নি, জন্মের পর থেকে এখনো যাদের প্রেশার লো, তাদেরকে এখনো লো প্রেশারের চিকিৎসার জন্য একটি বারের জন্যও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি নিশ্চয়ই। অথচ দেখবেন, একজন হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীকে কিছু দিন পর পর ডাক্তারের কাছে যেতে হয় এবং নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। নয়তো প্রেশার বেড়ে গিয়ে মানুষ অস্থির হয়ে উঠে, কখনো কখনো হার্ট অ্যাটাকেও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। জানি না, তবু লো প্রেশারকে হাই প্রেশারের চেয়ে খারাপ বলে প্রচার করার মানে কী?
আমি নিজেও শৈশব কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে লো প্রেশারকে একটি নেতিবাচক বিষয় বলেই জেনে আসছি। এখনো প্রায়ই দেখছি অনেক মানুষ নিজের লো প্রেশার নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করে।
বিগত কয়েক বছর ধরে নিজের প্রয়োজনেই জটিল রোগগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে ও পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিস নিয়ে অনেক সত্য আমার সামনে চলে আসে। সেই সত্যগুলো অবলম্বন করে আমি লিখে যাচ্ছি। বেশ খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। এই সত্যগুলো মানুষের সামনে না এলে মানুষ তিনটি বিশেষ রোগে এখনকার চেয়ে আরো ব্যাপকহারে আক্রান্ত হবে। রোগ তিনটি হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক। ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের ব্যাপারে এটা আমার নিকট পরিষ্কার হয়েছে, এই রোগ দুইটির কারণ নিয়ে যত কথাই প্রচার করা হোক না কেন, এগুলোর কারণ এখনো অপরিষ্কার। প্রচারিত কোনো কারণই সঠিক নয়।
নরমাল প্রেশারকেই লো প্রেশার বলা হয়
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাকের সঠিক কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় আমার নিকট দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর লো প্রেশার সম্পর্কে এটাই আমার নিকট পরিষ্কার হয়েছে, লো প্রেশারকে ‘লো প্রেশার’ না বলে ‘নরম্যাল প্রেশার’ বলে প্রচার করলেই ভালো হতো। কারণ একজন মানুষের রক্তচাপ যখন বেড়ে যায়, তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ যার নেই, তার রক্তচাপ কি তাহলে নিম্ন রক্তচাপ বা কম রক্তচাপ? মোটেই না। তার রক্তচাপ স্বাভাবিক রক্তচাপ। আমরা অহেতুক তার রক্তচাপকে লো প্রেশার বলে মানুষের মাথা নষ্ট করছি; মানুষকে আতঙ্কিত করছি। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপকে শুধু লো প্রেশার বলেই ক্ষান্ত হইনা, বরং লো প্রেশারকে হাই ব্লাড প্রেশারের চেয়েও ক্ষতিকর বলে মানুষকে অহেতুক আতঙ্কিত করি।
লো প্রেশার কী? কখন প্রেশার লো হয়?
এবার দেখি আরেকটি নিবন্ধ। ‘‘লো প্রেশার = হার্ট অ্যাটাক’’ শিরোনামে বাংলাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম. শমসের আলী একটি নিবন্ধ লিখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ১৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে। সেখানে বলা হয়, ‘‘মানবদেহে রক্তচাপের একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে। তার ওপর ভিত্তি করেই উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার) ও কম রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেশার) পরিমাপ করা হয়। রক্তচাপ একটি সুনির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে থাকে। রেঞ্জের উপরের মাপকে সিস্টলিক রক্তচাপ ও নিম্নের মাপকে ডায়োস্টলিক রক্তচাপ বলা হয়। এ মতে মানবদেহে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১৩০/৮০ মি.মি. থেকে ৯০/৬০ মি.মি. মানে সিস্টলিক ১৩০ থেকে ৯০ এর মাঝে এবং ডায়োস্টলিক ৮০ থেকে ৬০ এর মাঝে। যদি কারও এর চেয়ে বেশি মাত্রার রক্তচাপ থাকে তবে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার) বলা হয় এবং যদি কারও এর চেয়ে কম রক্তচাপ থাকে, তবে এই অবস্থাকে কম রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেশার) বলা হয়ে থাকে।’’
এই নিবন্ধে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ‘‘মানবদেহে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১৩০/৮০ মি.মি. থেকে ৯০/৬০ মি.মি. মানে সিস্টলিক ১৩০ থেকে ৯০ এর মাঝে এবং ডায়োস্টলিক ৮০ থেকে ৬০ এর মাঝে। যদি কারও এর চেয়ে বেশি মাত্রার রক্তচাপ থাকে তবে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার) বলা হয় এবং যদি কারও এর চেয়ে কম রক্তচাপ থাকে, তবে এই অবস্থাকে কম রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেশার) বলা হয়ে থাকে।’’ এখানে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক রক্তচাপের চেয়ে বেশি হওয়াই হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। এ থেকে সহজেই বুঝা যায়, যার উচ্চ রক্তচাপ নেই, তার শরীরে রক্তচাপ নিশ্চয়ই স্বাভাবিক। আমরা স্বাভাবিক রক্তচাপকে লো প্রেশার বলে মানুষকে শুধু আতঙ্কিতই করছি। এই নিবন্ধে যে শিরোনাম দেয়া হয়েছে, তা দেখে যে কোনো লো প্রেশারের রোগী আতঙ্কিত হতে পারে।
লো প্রেশার কি কোনো রোগ?
‘‘নিম্ন রক্তচাপ যখন সমস্যা’’ শিরোনামে ২৫ মার্চ, ২০১৮ তারিখের কালের কন্ঠে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি সেখানে লিখেন, ‘‘কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রেশার কম থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি যদি কোনো অসুবিধা অনুভব না করেন, তবে এটা তাঁর জন্য স্বাভাবিক। নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু এটা কোনো রোগ নয়, তাই এদের ক্ষেত্রে একে রোগ বানানো কিংবা চিকিৎসারও দরকার নেই। হাইপোটেনশন হলো অন্য রোগের প্রকাশ। কারো রক্তচাপ নিচের দিকে থাকলে তার বরং কার্ডিয়াক সমস্যা কম হয়।’’
এই নিবন্ধে অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, ‘‘কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রেশার কম থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি যদি কোনো অসুবিধা অনুভব না করেন, তবে এটা তাঁর জন্য স্বাভাবিক।’’ এই কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি স্বাভাবিকভাবে প্রেশার কম থাকাটাই স্বাভাবিক রক্তচাপ। তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা কোনো রোগ নয়।’’ আরো বলেন, ‘‘কারো রক্তচাপ নিচের দিকে থাকলে তার বরং কার্ডিয়াক সমস্যা কম হয়।’’
হার্ট অ্যাটাকে কারা আক্রান্ত হয়?
কার্ডিয়াক বা হৃদরোগের সমস্যা হয় শুধু তাদের, যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে কখনো কোনো কারণে বেড়ে গিয়ে মানুষের হার্ট ব্লক্ড হয়ে যায়। কিন্তু যার রক্তচাপ স্বাভাবিক, তার হার্ট কিভাবে ব্লক্ড হবে? এজন্য দেখবেন, যারা হৃদরোগে ভুগছে, তাদের অধিকাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আগে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছিল। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া ছাড়া খুব কম মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। মূলত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই তিনটি রোগ ঐ সব মানুষের হয়, যাদের শরীরে চর্বি বেশি এবং চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো উপায় অবলম্বন করে না। যাদের শরীরে চর্বি নেই বা থাকলেও একেবারে কম, তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয় না, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। শরীরে চর্বি বেশি নেই বলে তাদের হার্টও ব্লক্ড হয় না।
ব্রেইন স্ট্রোকের জন্য কি লো প্রেশার দায়ী?
এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদেরকে জানতে হবে, কেন মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়? ‘স্ট্রোক যেভাবে প্রতিরোধ করবেন’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৫ অক্টোবর ২০২২। লিখেন অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ। তিনি সেখানে ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘‘স্ট্রোকের কারণও নানাবিধ। রক্তনালি ব্লক হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয়, তা সেরিব্রাল ইনফার্কশন। মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়; একে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক। ৮৫ শতাংশ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে। মাত্র ১৫ শতাংশ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে।
ইসকেমিক স্ট্রোকে রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণ হলো রক্তে কোলেস্টেরল বা খারাপ চর্বির আধিক্য। ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, অলস জীবনযাপন, স্ট্রেস, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, হার্টের অসুখ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া রক্তনালির জন্মগত ত্রুটির কারণেও হতে পারে।’’
এই নিবন্ধ থেকে আমরা পরিষ্কার ধারণা পাই, ব্রেইন স্ট্রোকের জন্য লো প্রেশার নয়, বরং হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ দায়ী।
এখন আমাদের শুধু জানা দরকার, লো প্রেশার অন্য কোনো ক্ষতির কারণ কিনা? লো প্রেশার মানে যদি স্বাভাবিক রক্ত চলাচল হয়, তাহলে তা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে কিভাবে? প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ‘লো প্রেশারে আক্রান্ত মানুষ’ শুধু শারীরিকভাবেই একটু দুর্বল থাকতে পারেন। কখনো অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের সাথে যখন তীব্র ক্ষুধা বা পিপাসা যোগ হয়, শরীর থেকে কোনো দুর্ঘটনায় বা রোগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তখন মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গিয়ে মানুষ তাৎক্ষণিক সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতে পারে। এতটুকুই। এই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলা থেকে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে গিয়ে মানুষ মারা যায়, সেজন্য রক্তচাপ কমে যাওয়াকে দায়ী করার সুযোগ নেই; সেজন্য দায়ী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
এই নিবন্ধে রেফারেন্স হিসেবে প্রথমে উল্লেখিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে বা কোনো কারণে প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষণিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে।’’ এই ক্ষতিগুলোর সম্ভাবনা মোটেই নেই যদি অন্য কোনো কারণ ছাড়া এমনিতেই মানুষের রক্তচাপ কম থাকে। আপনি আপনার পরিচিত অন্তত ১০ জন মানুষের খোঁজ নিয়ে দেখুন, যারা কায়িক শ্রমের পেশায় নিয়োজিত, দেখবেন তারা ৫০—৬০ বছর বয়সে এসেও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়নি এবং তারা কিডনী, মস্তিষ্ক নষ্ট হওয়া বা আকস্মিক মৃত্যুর মুখোমুখি হয়নি কখনো। শুধু হয়তো কখনো কখনো অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছে। সেই জন্য কিন্তু রক্তচাপ কম হওয়াকে দায়ী না করে দায়ী করতে হবে প্রচুর ক্ষুধা নিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করাকে।
লো প্রেশার নয়, বরং হাই ব্লাড প্রেশার ক্ষতিকর
এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন, লো প্রেশার থেকে মানুষ অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয় না, বরং হাই ব্লাড প্রেশার থেকেই মানুষ হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। লো প্রেশার কোনো রোগের নাম হলে লো প্রেশার যাদের, তাদেরকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হতো এবং লো প্রসার দূর করা বা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হতো। কিন্তু কোনোটিই করতে হয় না। কারণ লো প্রেশার কোনো রোগ নয়, বরং রক্তচাপের স্বাভাবিক অবস্থা।
শুধু তা—ই নয়, লো প্রেশার বা স্বাভাবিক রক্তচাপ যাদের, তারা কখনো কোনোভাবে ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। তাই লো বা নরমাল প্রেশারকে আমরা আর ক্ষতিকর না ভেবে শরীরের জন্য আশীর্বাদ বা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসেবেই মনে করবো এবং লো প্রেশার ধরে রাখার চেষ্টা করবো। কারণ প্রেশার হাই হয়ে গেলেই বিপদ।
নূর আহমদ