হার্ট অ্যাটাকের ভয়বহতা এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়
হার্ট অ্যাটাকের ভয়বহতা এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়
নূর আহমদ
বর্তমান বিশ্বে মানবমৃত্যুর জন্য যে রোগগুলো বেশি দায়ী,
সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক।
শুধু তা-ই নয়, মানুষের
অকালমৃত্যুর জন্যও সবচেয়ে বেশি দায়ী রোগটির নাম হার্ট অ্যাটাক। ‘গত বছর সর্বাধিক
মৃত্যু হৃদরোগ, ডায়াবেটিস
আর ক্যান্সোরে: ডব্লিউএইচও’ শিরোনামে দৈনিক বণিকবার্তায় ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগগুলো
এখন বিশ্বের মানুষের অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে দুই দশক আগেও
পৃথিবীতে এ পরিস্থিতি ছিল না। এ নাটকীয় পরিবর্তনটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে এক দশক
ধরে। আজ বিৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত প্রতিবেদন
অনুযায়ী, এখন মৃত্যুর শীর্ষ ১০
কারণগুলোর মধ্যে সাতটিই অসংক্রামক রোগ। ২০০০ সালে যেখানে ১০টি কারণের মধ্যে চারটি
কারণ ছিল এ ধরনের রোগ। এছাড়া হৃদরোগ এখন সবচেয়ে বড় ঘাতক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে-
বিশ্বের সমস্ত মৃত্যুর ১৬ শতাংশের জন্যই দায়ী এই রোগ।’’
‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে’ শিরোনামে বাংলাদেশ জার্নালে
বিবিসি বাংলার সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘‘২০১৭
সালে বিশ্বে মারা গেছে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ১৯৯০ সালের তুলনায় যা দশগুণ
বেশি। বিশ্বে বর্তমানে যে রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় তা হলো হৃদরোগ
(কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ)। এটি হৃৎপিণ্ড ও ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রতি তিনটি মৃত্যুর জন্য এই রোগ দায়ী।’’
‘তরুণদের নতুন দুশ্চিন্তার নাম হৃদরোগ’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে ১৮
সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লেখক ডা. এ কিউ এম রেজা উল্লেখ
করেন, ‘‘বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুর
অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। একটা সময় সকলের ধারণা ছিল প্রবীণরাই হার্ট
অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে সেই ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি
এবং তরুণ, যুবক বা মধ্যবয়স্করা
হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছে।’’
আমরা
যদি আমাদের পরিচিত ও কাছের মানুষদের মৃত্যুর কারণের দিকে লক্ষ্য করি, আমরা দেখবো, বাস্তবেই
মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি যেই রোগটিতে মারা যায় এবং যেই রোগটিতে মানুষের অকালমৃত্যু বেশি
ঘটে, সেটি হচ্ছে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক।
বয়স্ক
মানুষের পাশাপাশি তরুণরাও এখন ব্যাপক হারে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা
যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে আমার পরিচিত অনেক মানুষকে দেখেছি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে
এবং মারা যেতে। অনেক মানুষ এখনো হার্ট অ্যাটাকে (হৃদরোগ) আক্রান্ত হয়ে কঠিন জীবন যাপন
করছেন। আমার পরিচিত বেশ কিছু মানুষ বিগত কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই হার্ট
অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ করেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
দুঃখজনক
বিষয় হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকের সঠিক কারণ নিয়ে সারা বিশ্বেই মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে
আছে। মনে করা হয়, হার্ট অ্যাটাকের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা।
এর পাশাপাশি ধূমপানকেও হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
‘মানসিক চাপ থেকে হৃদরোগ’ কথাটি লিখে গুগলে খুঁজলে দেখবেন
অনেকগুলো নিবন্ধ সামনে চলে আসছে। এগুলোতে নানানভাবে মানসিক চাপের সাথে হার্ট
অ্যাটাকের সম্পর্ক আছে বলে উল্লেখ করা হয়। ‘হৃদরোগে বছরে পৌনে তিন লাখ মৃত্যু’
শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে
উল্লেখ করা হয়, ‘‘পৃথিবীব্যাপী মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। যার অন্যতম
কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও তামাকজাত পণ্য সেবন। দেশে বছরে পৌনে তিন লাখ (২ লাখ ৭৭ হাজার)
মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। যার প্রধান কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা এই দুটি বিষয়
অর্থাৎ তামাক ও উচ্চ রক্তচাপকে বেশি দায়ী করছেন।’’
‘দেশে হৃদরোগে মৃত্যুর ৩০ শতাংশের কারণ ধূমপান’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে ০৩ জুন
২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও)
তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে
প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।’’
হার্ট অ্যাটাকের এই দুইটি কারণকে
হার্ট অ্যাটাকের জন্য প্রচারিত সবচেয়ে বড় ভুল কারণ বলে আমি মনে করি। ভুল কারণের পাশাপাশি
কিছু সঠিক কারণও এই সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
‘মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তায় হয় হার্ট অ্যাটাক’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে ০৬
অক্টোবর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে
উল্লেখ করা হয়, ‘‘বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি হৃদ্রোগী
আছে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে ৩ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। উচ্চ রক্তচাপ,
ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য,
সিগারেট ও তামাক-জাতীয় দ্রব্য,
স্থূলতা, কায়িক পরিশ্রমহীনতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে।’’
এখানে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসেবে উচ্চ
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে
চর্বির আধিক্য, সিগারেট
ও তামাক-জাতীয় দ্রব্য, স্থূলতা, কায়িক
পরিশ্রমহীনতা, অস্বাস্থ্যকর
খাদ্যাভ্যাস এই ৭টি বিষয়কে দায়ী করা হয়। নিবন্ধের শিরোনাম ‘মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তায়
হয় হার্ট অ্যাটাক’ হলেও এখানে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসেবে জানি না কেন ‘মানসিক
উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা’ এই কারণটি উল্লেখ করা হয়নি। আবার উপরে দৈনিক যুগান্তরে
প্রকাশিত ‘হৃদরোগে বছরে পৌনে তিন লাখ মৃত্যু’ নিবন্ধে আবার হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী
বলে উল্লেখ করা হয় তামাক ও উচ্চ রক্তচাপকে, যেখানে মানসিক চাপের কথা উল্লেখ নেই।
মানসিক চাপ ও ধূমপানকে হার্ট অ্যাটাকের কারণ মনে করা যে ভুল, তা স্পষ্ট হবে
মানুষ কিভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় সেই দিকে একটু লক্ষ্য করলে। ‘তরুণদের নতুন
দুশ্চিন্তার নাম হৃদরোগ’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে
প্রকাশিত নিবন্ধে লেখক ডা. এ কিউ এম রেজা হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হয়, তা স্পষ্টভাবে
উল্লেখ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কমন হলেও অনেকেই হয়তো জানেন না যে হার্ট অ্যাটাক
কি বা কেন হয়। তাদের সুবিধার্থে বলে রাখি, মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন, হার্ট অ্যাটাক যে নামেই ডাকুন না কেন,
এটি একটি রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা জনিত মেডিক্যাল
জটিলতা। কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে হার্টের রক্ত চলাচল হঠাৎ থেমে গেলে হার্ট অ্যাটাক
হয়ে থাকে। সাধারণত রক্তনালীতে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমে প্লেক গঠিত হয়,
যাকে আমরা ব্লক নামেও চিনি। এটি হার্ট অ্যাটাকের
অন্যতম কারণ। সহজভাবে বলতে গেলে, ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনী হৃদযন্ত্রের একাংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত
চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনী দ্রুত
পুনরায় চালু করা না যায়, তাহলে সেই ধমনী দ্বারা চালিত হৃদযন্ত্রের অংশটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়,
যার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়।’’
এখানে
তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত রক্তনালীতে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমে প্লেক গঠিত
হয়, যাকে
আমরা ব্লক নামেও চিনি। এটি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।’’ এবার আপনি বলুন, যাদের
শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হতে পারে না, তারা কিভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত
হবে, তাদের জীবনে যতোই মানসিক চাপ থাকুক আর তারা যেতো ধূমপান বা তামাক সেবন করুক?
বিশেষ করে যারা নিয়মিত ঘামঝরানো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করে, তাদের শরীরে চর্বি ও
কোলেস্টেরল জমা হবার সুযোগই পায় না। তাদের জীবনে যতো টেনশন থাক, তারা সারাদিন
ধূমপান করুক, তারা কিভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবে! ডা. এ কিউ এম রেজা তাঁর এই নিবন্ধে আরো বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের মতে,
আধুনিক জীবনযাপনে অসংগত পরিবর্তন ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাই
হলো হার্ট ও রক্তনালীতে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার দুটি বড় কারণ।’’
উপরে ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে’
শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, ‘‘২০১৭ সালে বিশ্বে মারা গেছে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ
মানুষ। ১৯৯০ সালের তুলনায় যা দশগুণ বেশি।’’ হার্ট অ্যাটাকে মানবমৃত্যুর এই উর্ধ্বগতি
কেন? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষ এখন আগের তুলনায় বেশি আরামপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ১৯৯০
সাল বা তার আগে মানুষের জীবন কায়িক শ্রম যেরকম ভরপুর ছিল, এখন কি মানুষের জীবনে
সেরকম কায়িক শ্রম আছে? নেই। আরামদায়ক প্রযুক্তির জয় জয়কারে মানুষ এখন দিন দিন কায়িক
শ্রম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমার ছোটবেলায় আমি মানুষকে যেভাবে কায়িক শ্রমে লিপ্ত
থাকতে দেখেছি, এখন তার ২০ শতাংশও নেই। কায়িক শ্রম থেকে মানুষ যতো দূরে সরে যায়, মানুষ
ততোই স্থূল হয়ে যায়, মানুষের শরীরে ততো বেশি চর্বি ও কোলেস্টেরল জমে যায়। এবং এই
কারণে মানুষ ততো বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়।
আপনি দেখবেন, যারা এখনো বিভিন্ন কায়িক শ্রমের পেশায় নিয়োজিত, তাদের অনেকেই
ধূমপায়ী হওয়া সত্ত্বেও এবং তাদের অনেকের জীবনে নানান মানসিক চাপ থাকা সত্ত্বেও
তারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না, যতোদিন কায়িক শ্রমে নিয়োজিত থাকে। যদি ধূমপানে
এবং মানসিক চাপে মানুষ সত্যিই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতো, তাহলে নিয়মিত কায়িক
শ্রমে লিপ্ত মানুষরা কেন অন্যদের তুলনায় একেবারে কম হারে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত
হয়?
আমার জীবনে আমি বিভিন্ন সময় নানান টেনশনে ভুগেছি। তবু এখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত
হইনি। এর কারণ আমার শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হবার সুযোগ হয় না নিয়মিত কায়িক
শ্রম করার কারণে। জীবনে তেমন কোনো টেনশন নেই, এমন কোনো মানুষকে আপনি কি কখনো হার্ট
অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখেননি? যদি না দেখে থাকেন, ভবিষ্যতে আপনার পরিচিত কেউ
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে খোঁজ নেবেন, সে কি কোনো বিষয়ে টেনশনে ভোগা অবস্থায়
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছে, নাকি স্বাভাবিক অবস্থায়? দেখবেন অনেক সুখী মানুষও
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, মারা যায়, দেখবেন অনেক অধূমপায়ী মানুষও হার্ট
অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়। কারণ তারা আরামে থাকতে অভ্যস্ত, তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত
কায়িক শ্রম করতেন না।
মানসিক চাপে সত্যিই মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় কিনা, এই বিষয়ে কোনো
গবেষণা করতে হলে, যেই বিষয়গুলো দেখতে হবে- (১) যারা নিয়মিত কায়িক শ্রম করে এবং
তাদের জীবনে প্রচুর টেনশনও আছে, তাদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার হার কত? (২)
আর যারা আরামে থাকতে অভ্যস্ত এবং তাদের জীবনে তেমন টেনশন নেই, তাদের হার্ট
অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার হার কত? এই দুইটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে গবেষণা করলে
মানসিক চাপে সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয় কিনা, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ধূমপানে হার্ট অ্যাটাক হয় কিনা, এই বিষয়ে গবেষণা করতে হলে যেই বিষয়গুলোর প্রতি
লক্ষ্য রাখতে হবে- (১) অনেক বছর ধূমপান করছেন এবং অনেক বছর ধরে নিয়মিত কায়িক
শ্রমের কোনো পেশায়ও লিপ্ত, এমন মানুষের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার হার কত? (২)
আর ধূমপান থেকে দূরে, কিন্তু আরামে আরামে দিন কাটাচ্ছেন অনেক বছর ধরে, এমন মানুষের
হার্ট অ্যাটাকের হার কত? এই দুইটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে গবেষণা করলে স্পষ্ট
হবে, ধূমপানের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সত্যিই কোনো সম্পর্ক আছে কিনা!
এটা ঠিক, বাস্তবেই দেখা যায় মানসিক অস্থিরতায় ভুগে অনেক মানুষ হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত হয়। এটা কেন? তিন শ্রেণির মানুষ মানসিক অস্থিরতায় ভুগে হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত হয়, মারাও যায়। (১) যারা আগেও দুই-একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন।
(২) যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত (৩) যারা আরামে থাকছেন অনেক বছর ধরে এবং আরামে
থাকার কারণে তাদের শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হয়ে গেছে।
আপাত
দৃষ্টিতে এই তিন শ্রেণির মানুষ টেনশনে হার্ট অ্যটাকে আক্রান্ত হলেও তাদের হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত হবার জন্য টেনশন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়। প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হচ্ছে, আগে থেকেই
হার্ট অ্যাটাকের রোগী হওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকার কারণে শরীরে
চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হয়ে যাওয়া। যদি এই তিন শ্রেণির মানুষ আগে দুই-একবার হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত না হতো, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত না হতো এবং নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করার
মাধ্যমে শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হবার সুযোগ না দিতো, তাহলে কি এরা হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত হতো? কখনোই না।
ধূমপানে
কখনোই মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না কারণ ধূমপানে শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল
জমা হয় না। মানসিক চাপেও কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না কারণ মানসিক চাপে ভুগলে
মানুষের শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হয় না। হার্ট অ্যাটাকের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী
হচ্ছে কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকা, আরামে আরামে জীবন যাপন করার ফলে শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল
জমা হয়ে যাওয়া।
‘মানসিক চাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক নেই’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১০ ডিসেম্বর
২০১৫ তারিখে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘একটা সময় মনে করা হতো
মানসিক চাপ, অবসাদ
কিংবা অসুখী হলে মানুষের মৃত্যু হয়। কারণ মানসিক চাপে থাকলে সেটি হৃদপিণ্ডের উপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানস্যাটে প্রকাশিত এক গবেষণায়
বলা হচ্ছে অতীতের এই ধারনা ভুল ছিল এবং সেটি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।
যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা গত বারো বছর ধরে যৌথভাবে এই জরিপ চালিয়েছেন।
এই জরিপে উভয় দেশের ১০ লাখ নারীর মতামত নেয়া হয়েছে। এরপর সেটির ফলাফল প্রকাশ
করা হয়েছে।’’
আপনি যদি হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে চান, অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা কমাতে চান,
নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করুন। কায়িক শ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে দৈনিক
কমপক্ষে একবার শরীর থেকে ভালোভাবে ঘাম ঝরাতে পারলে আপনার শরীরে চর্বি ও কোলেস্টেরল
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আপনি হার্ট অ্যাটাক নামক বিপজ্জনক রোগ থেকে
সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন।