হার্ট দুর্বল হওয়ার কারণ কি? প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়?

হার্ট দুর্বল হওয়ার কারণ কি? প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়? লো প্রেসার থেকে কি হার্ট অ্যাটাক হয়? সাইকেল চালালে কি হার্ট দুর্বল হয়ে যায়?

নূর আহমদ

হার্ট দুর্বল হওয়ার কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। একবার দু’বার নয়, অনেকবার শুনেছেন, আমার বিশ্বাস। কারণ আপনি যে দেশে বসবাস করছেন, আমিও সে দেশেই বসবাস করছি। একই দেশের আলো—বাতাস সে দেশের সবার গায়ে লাগবে কমবেশ, এটাই স্বাভাবিক। এই দেশে প্রচলিত প্রবাদগুলো আপনি যেভাবে শুনতে পান, আমিও শুনতে পাই। এই দেশের মানুষের ধ্যান—ধারণার সাথে আপনি যেমন পরিচিত, আমিও তেমনি পরিচিত।

হার্ট দুর্বল হওয়ার কারণ কি? প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়?


শৈশব থেকে অনেক মানুষের মুখে হার্ট দুর্বল হয়ে যাবার কথা শুনেছি। তবে একটি কথা আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই হার্ট দুর্বলতার সাথে সম্পর্কিত করা হয় সাইকেল চালানোকে। বলা হয়, সাইকেল চালালে নাকি হার্ট দুর্বল হয়ে যায়। আমাকেও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন মানুষ সাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করেছে এই বলে যে, সাইকেল চালালে নাকি হার্ট দুর্বল হয়ে যায়!

প্রকৃতপক্ষে হার্ট তখন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যখন হার্টে চর্বি জমে গিয়ে হার্ট রক্ত সরবরাহে অক্ষম হয়ে পড়ে। কিন্তু শরীর দুর্বল লাগা, বসা থেকে উঠলে মাথা ঘুরে যাওয়া এগুলো হার্ট দুর্বল হবার কারণে নয়, বরং হার্ট সবল হবার কারণে। এটা তাদের ক্ষেত্রে, যাদের প্রেশার লো। এই দুর্বলতা হার্টের দুর্বলতা নয়, বরং শরীরের দুর্বলতা। এই দুর্বলতার জন্য পর্যাপ্ত খাওয়া—দাওয়া করা দরকার, শারীরিক পরিশ্রমের আগে ক্ষুধা দূর করা দরকার এবং দুধ, গরুর মাংসসহ ভালো ভালো খাবার খাওয়া দরকার।

হার্ট দুর্বল হবার সাথে সাইকেল চালানোর সম্পর্কটাও এরকম সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তা।

সাইকেল চালালে হার্ট দুর্বল হয় না

সাইকেল চালালে হার্ট দুর্বল হয় না, বরং হার্ট শক্তিশালী থাকে। শরীর দুর্বল হতে পারে। সাইকেল চালানোসহ বিভিন্ন কায়িক শ্রম নিয়মিত করার কারণে যাদের শরীর দুর্বল থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের হার্ট সবল থাকে। এটা একটা চিরন্তন সত্য। কারণ যাদের শরীরে চর্বি বেশি, তারা শারীরিকভাবে শক্তিশালী হলেও একসময় তাদেরকে আক্রমণ করে উচ্চ রক্তচাপ। এরপর তাদের অনেকে হার্টে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হবার কারণে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়।

সাইকেল চালালে হার্ট শক্তিশালী থাকে

যারা নিয়মিত সাইকেল চালান, তাদের শরীরে চর্বি জমতে পারে না। যার ফলে তাদের শরীর দুর্বল থাকতে পারে, কিন্তু চর্বি না থাকার কারণে তাদের হার্ট ব্লাড সরবরাহে সক্ষম ও শক্তিশালী থাকে।

আমার পরিচিত কিছু রিকশাচালক আছেন, যারা আগে কষ্টসাধ্য উপায়ে পায়েচালিত রিকশা চালাতেন। এখন চালাচ্ছেন অটোরিকশা। অটোরিকশা চালানোর পর পরই তারা মোটা হয়ে গেছেন। কারণ এখন কোনো শারীরিক পরিশ্রম নেই। এই লোকগুলো ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন, সন্দেহ নেই। কেউ কেউ হয়েছেনও।

পায়েচালিত রিকশা চালানো আর বাইসাইকেল চালানো একই রকম কাজ

এটা আমাদের জানা কথা, পায়েচালিত রিকশা চালানো আর বাইসাইকেল চালানো একই রকম কাজ। যেভাবে পায়েচালিত রিকশা চালানোর কারণে মানুষের শরীরে চর্বি জমে না, মানুষের হার্ট সবল থাকে, একইভাবে বাইসাইকেল চালানোর ফলেও মানুষের শরীরে চর্বি জমতে পারে না এবং মানুষের হার্ট সবল থাকে, দুর্বল হবার প্রশ্নই আসে না।

কায়িক শ্রমের ফলে হার্ট সবল থাকে

আমাদের এলাকায় আমার সাথে বেশ পরিচিত ৬—৭ জন লোক আছেন, যাদের বয়স ৪০ থেকে ৬০ বছরের মতো। এরা মানুষের কায়িক শ্রমের কাজগুলো করে থাকেন দিনমজুর হিসেবে। এদের কেউই এই বয়সে এসেও হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হননি; উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসেও নয়।

এদের হার্ট কি দুর্বল? মোটেই না। এদের হার্ট সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। কারণ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে এদের হার্টে কোনো অবাঞ্চিত চর্বি জমতে পারে না বলে এদের হার্ট ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারে।

লো প্রেসার থেকে কি হার্ট অ্যাটাক হয়?

অনেকে বলে থাকেন বা বিশ্বাস করেন, লো প্রেসারের কারণে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। এই কথাটি মোটেও সঠিক নয়। বরং প্রেসার সব সময় লো থাকলে মানুষ হার্ট অ্যাটাক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। যেহেতু মানুষের শরীরে যখন চর্বি কোলেস্টেরল কম থাকে, তখন মানুষের প্রেসার লো থাকে। আর শরীরে চর্বি কোলেস্টেরল কম থাকলে মানুষের হার্ট ব্লক হতে পারে না। যাদের শরীরে চর্বি কোলেস্টেরল বেশি হয়ে যায়, তাদের হার্ট চর্বির কারণে রক্ত সরবরাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যাবার কারণেই তারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। আপনি দেখবেন, যারা অনেক বছর ধরে কায়িক শ্রমের বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত, তাদের শরীরে চর্বি কোলেস্টেরল বাড়তে বা জমা হতে পারে না, তাই তাদের প্রেসার সব সময় নরমাল বা লো থাকে এবং তারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। যারা ‍উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তারাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বেশি। প্রেসার সব সময় লো থাকলে মানুষ হার্ট অ্যাটাক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। লো প্রেসার থেকে হার্ট অ্যাটাক হয়, এই কুধারণা মন থেকে দূর করতে হবে।

হার্ট কখন দুর্বল হয়?

এককথায় মানুষের হার্ট দুর্বল তখন হয়, যখন মানুষ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে দূরে থাকে, আরামে আরামে থাকে। হার্ট সবল রাখতে হলে মানুষকে শারীরিক পরিশ্রমের কাজে সময় দিতে হবে দৈনিক অন্তত ৪০ মিনিট। তাহলে হার্ট কখনো দুর্বল হবে না। এর ফলে শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকেও মানুষ নিরাপদ থাকবে; নিরাপদ থাকবে কিডনী বিকলতা এবং চোখের কিছু সমস্যা থেকেও।

তাই প্রেসার যেনো সব সময় লো বা নরমাল থাকে, সে ব্যাপারে সব সময় চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। লো ব্লাড প্রেসার নয়, বরং হাই ব্লাড প্রেসার জীবন ও শরীরের জন্য বিপজ্জনক।

নূর আহমদ

শিক্ষক; ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক

Next Post Previous Post