ওজন কমানোর উপায় । ওজন নিয়ন্ত্রণের কিছু উপকারি দিক

ওজন নিয়ন্ত্রণের কিছু উপকারি দিক

নূর আহমদ

ওজন বেড়ে যাওয়া এখন এক বড় সমস্যা। এই সমস্যায় এখন সমাজের অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মানুষের ওজন বেড়ে যাবার সমস্যা বাড়ছে। ওজন বেড়ে যাবার অনেক বিপদ আছে। একটা বড় বিপদ হচ্ছে, ওজন বেড়ে যাবার আগে অনেকেই বুঝতে পারেন না, ওজন বেড়ে যাওয়া যে অনেক দিক থেকে ক্ষতিকর।

ওজন বেড়ে গেলে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অল্প পরিশ্রমেই মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে, অস্থির হয়ে পড়ে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। ওজন বেড়ে গেলে চলাফেরায় নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ওজন বেড়ে যাবার এই বিপদগুলোর চেয়ে বড় একটি বিপদ হচ্ছে, ওজন বেড়ে যাবার কারণে মানুষ বেশ কিছু রোগের ঝুঁকিতে পড়ে যায় এবং অনেক মানুষ ওই রোগগুলোর অনেকগুলোকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

ওজন কমানোর উপায়


ওজন বেড়ে গেলে মানুষ যেসব রোগের ঝুঁকিতে পড়ে, যেসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ।

এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার সাথে ওজন বেড়ে যাবার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আপনি দেখবেন, আপনার পরিচিত যারা এই রোগগুলোর কোনো না কোনোটিতে আক্রান্ত, তারা এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার আগে তাদের অধিকাংশের ওজন বেশি ছিল। অনেকে রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার পর খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়ে বা ব্যায়াম করে ওজন কমিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ওজন আগে বেশি ছিল।

আপনি দেখবেন, যাদের ওজন কম, তাদের অনেকেই এই রোগগুলোর কোনোটিতে আক্রান্ত নয়।

তবে ব্যতিক্রম আছে। ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটার কারণও আছে। অনেকে চিকন থাকা সত্ত্বেও এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় অনেক দিন ধরে কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকার কারণে। কিন্তু চিকন মানুষ নিয়মিত কায়িক শ্রম করলে এই রোগগুলো থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।

দেখবেন, অনেকেই ছাত্রজীবনে চিকন ছিল। এই রোগগুলোর কোনোটিতে আক্রান্ত ছিল না। কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশ করার কয়েক বছরের মধ্যেই ওজন বেড়ে গেছে এবং এই রোগগুলোর কোনোটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মেয়ে বিয়ের আগে চিকন থাকে। কিন্তু বিয়ের পর আরামে থাকতে শুরু করার পর ওজন বেড়ে যায় এবং এই রোগগুলোর কোনো না কোনোটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

আগের সময়, আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে মানুষ চিকন থাকতো বেশি, আরামে থাকার সুযোগ ছিল কম। তাই মানুষ সহজে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো না। তখন মানুষের এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার হার এখনকার মতো এতো ব্যাপক ছিল না, অনেক কম ছিল। কারণ মানুষ তখন বেশি বেশি কায়িক শ্রম করতো। মানুষের ওজন বেড়ে যাবার কোনো সুযোগ ছিল না। শেষ বয়সে কাজকর্ম থেকে অবসরে চলে যাবার পর কেউ কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো। কিন্তু যতোদিন মানুষ সাংসারিক কাজে লিপ্ত থাকতো, ততোদিন মানুষ চিকন থাকতো এবং এই রোগগুলো থেকে নিরাপদ থাকতো।

মানুষের জীবনে যখন থেকে আরামের প্রযুক্তি আসতে শুরু করেছে, তখন থেকে মানুষের ওজন বেড়ে যাবার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষ এই রোগগুলোতে ব্যাপকহারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে।

আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস কি সত্যিই বংশগত রোগ?

সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ এখন আরামে আরামে দিনের প্রায় পুরোটা  সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে তাদের ওজন বাড়ছে এবং তারা এই সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এখন অনেকটা মহামারীর মতো। প্রায় প্রতিটা পরিবারে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত মানুষ পাওয়া যায়। এর কারণ মানুষের জীবনে এখন কায়িক শ্রম তেমন নেই। মানুষ এখন মুটিয়ে যাচ্ছে বেশি। এনার্জি শুধু আর্ন করছে, বার্ন করছে না। এনার্জি আর্নের পাশাপাশি বার্ন করা না হলেই মানুষের ওজন বেড়ে যায়, মানুষ এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করা হলে মানুষ এই রোগগুলো থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে এবং মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক হয়, মানুষের জীবন স্বাভাবিক থাকে। মানুষ অনেকে বেশি বয়সেও ফিট থাকে। মানুষের দীর্ঘজীবন লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় উপায় নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘামঝরানো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা। আর বিকল্প উপায় হচ্ছে ডায়েট কন্ট্রোল করা। প্রতিদিত একবার কায়িক শ্রমের মাধ্যমে শরীর থেকে একবার ভালোভাবে ঘাম ঝরালে শরীরে চর্বি বেড়ে যাবার সুযোগ হবে না, ওজন না কমলেও ওজন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এভাবে নিয়মিত এনার্জি বার্ণ করলে শরীরে ঐসব রোগ হানা দিতে পারবে না, ওজন বেড়ে যাবার কারণে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত কায়িক শ্রম করার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে, নিয়মিত কায়িক শ্রম করলে মানুষ মনের ইচ্ছামতো যে কোনো খাবার খেতে পারে। শর্করা, চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড কোনো খাবারেই মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। দেখবেন, পেশাদারভারে কায়িক শ্রমে লিপ্ত মানুষরা কোনো খাবার খেতে চিন্তা করে না। তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তারা অনেক বেশি বয়সেও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে নিরাপদ থাকে।

তাই আসুন, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ৪০ মিনিটের মতো যে কোনোভাবে কায়িক শ্রম করি বা ব্যায়াম করি। ওজন বৃদ্ধিজনিতে সমস্যাগুলো থেকে আমরা দূর থাকবো। এই তিনটি রোগ আমাদেরকে আক্রমণ করতে পারবে না। আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।


নূর আহমদ

ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক

Next Post Previous Post